ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫ , ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
রামগতিতে জাল দলিলে জমি আত্মসাতের অভিযোগ শ্রীপুরে মাদক ব্যবসায়ী স্বামীর বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে গ্রামবাসী গাইবান্ধার ৫ সংসদীয় আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ঘোষণা নোয়াখালী-৪ আসন খসড়া প্রস্তাবের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সেনবাগের ১০টি সরকারি খাল দখলদারের কবলে জলাবদ্ধতা চরমে হিলিতে খুচরা বাজারে দাম কমল জিরার সুনামগঞ্জে ভারতীয় শাড়ি ও কসমেটিক্স আটক কোস্ট গার্ডের অভিযানে অস্ত্র-গুলিসহ আটক ২ পঞ্চগড়ে পাগল খ্যাত মামুন পেল জাতীয় পরিবেশ পদক চাঁপাইনবাবগঞ্জে আধাকিলো পাকা রাস্তা না থাকায় অচল ১০ কোটি টাকার ব্রিজ শিবপুরে হত্যা ও ডাকাতি মামলার আসামি অস্ত্রসহ গ্রেফতার চা বিক্রেতাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা আটক অভিযুক্ত ঘোড়াঘাটে পৌরতে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ নগরকান্দায় স্কুল মাঠে পানি জমে থাকায় শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যা কার্যকর হল বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশের ওপর আরোপ করা নতুন মার্কিন শুল্ক পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করতে চান জেলেনস্কি ৭৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় দাবানলের কবলে ফ্রান্স পাকিস্তানে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে ২ পুলিশ সদস্য নিহত ফিলিস্তিনি ফুটবলারকে গুলি করে হত্যা করলো ইসরায়েল নকআউট পর্বে উঠলো ইন্টার মায়ামি
আইসিডিডিআর,বি গবেষণা

ঢাকার ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সীসা প্রভাব মস্তিষ্কের বিকাশে

  • আপলোড সময় : ০৭-০৮-২০২৫ ০৬:৪৩:০০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৭-০৮-২০২৫ ০৬:৪৩:০০ অপরাহ্ন
ঢাকার ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সীসা  প্রভাব মস্তিষ্কের বিকাশে
ঢাকার ২ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের রক্তে বিপজ্জনক মাত্রায় সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে- যা তাদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ ও শারীরিক সুস্থতায় মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫০০ শিশুর রক্তে সীসার উপস্থিতি সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি, বিশেষ করে সীসা নির্ভর শিল্প কারখানার আশপাশের শিশুদের রক্তে সীসার মাত্রা দূরের এলাকায় বসবাসকারীদের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিষাক্ত ধাতু শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা ও শেখার দক্ষতাকে কমিয়ে দেয় এবং তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। এ অবস্থায় শিশুদের জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ খুবই জরুরি বলেও মনে করছেন তারা। গতকাল বুধবার দুপুরে আইসিডিডিআর,বি মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে সীসা দূষণ প্রতিরোধ অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে সীসা দূষণের ব্যাপকতা ও এর ভয়াবহতা তুলে ধরা এবং এর থেকে মুক্তির উপায়গুলো আলোচনা করা। সভায় জানানো হয়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পরিচালিত গবেষণায় ২ থেকে ৪ বছর বয়সী ৫০০ শিশুর রক্ত পরীক্ষা করে প্রতিটি শিশুর রক্তেই রয়েছে সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গবেষণা ফলাফল প্রসঙ্গে আইসিডিডিআর,বির অ্যাসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট ডা. জেসমিন সুলতানা জানান, গবেষণায় রক্তে সীসার মধ্যম মাত্রা ৬৭ মাইক্রোগ্রাম/লিটার পাওয়া গেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) নির্ধারিত উদ্বেগজনক মাত্রা ৩৫ মাইক্রোগ্রাম/লিটারের দ্বিগুণের বেশি। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সীসার মাত্রা উদ্বেগজনক স্তরের ওপরে ছিল। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সীসা নির্ভর শিল্প স্থাপনার ১ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের রক্তে সীসার মাত্রা ছিল ৫ কিলোমিটারের বেশি দূরে থাকা শিশুদের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি। অন্য সীসার উৎস হিসেবে ঘরের ভেতরে ধূমপান, দূষিত ধূলিকণা, সীসাযুক্ত প্রসাধনী সামগ্রী এবং রান্নার পাত্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আইসিডিডিআর,বির হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. সারাহ স্যালওয়ে বলেন, সীসা দূষণ বাংলাদেশের একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যা প্রায়ই আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। বিশেষ করে দূষণ সৃষ্টিকারী কারখানার আশপাশের শিশুরা এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং আইসিডিডিআর,বির সাবেক পরিচালক প্রফেসর স্টিভ লুবি বলেন, সীসা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে, যার ফলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা (আইকিউ) ও শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের ওপরও স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারে। আইসিডিডিআর,বির প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর ডা. মো. মাহবুবুর রহমান গত দশকের সীসা সম্পর্কিত গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে জানান, সীসা ও ব্যাটারি-সম্পর্কিত শিল্পকারখানা, সীসাযুক্ত রং ও প্রসাধনী, রান্নার পাত্রের মাধ্যমে সীসার সংস্পর্শ হচ্ছে, যা দেশের শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তবে রান্নায় ব্যবহৃত হলুদে সীসার মাত্রা কমাতে সচেতনতা ও আইন প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এসেছে। আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, সীসার বিষক্রিয়া নীরবে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেড়ে নিচ্ছে। এটি তাদের মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে এবং দেহে পুষ্টির ঘাটতি সৃষ্টি করে, যা বাংলাদেশের উন্নয়নের পথকে পিছিয়ে দেয়। তাই আমাদের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে সীসা নিঃসরণকারী উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে, যাতে প্রতিটি শিশু সুস্থ ও বুদ্ধিদীপ্ত হয়ে বেড়ে ওঠে। আলোচনা সভায় উপস্থিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দ্রুত সীসা-নির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়া এবং দূষণ কমানোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বিশেষ করে লেড-এসিড ব্যাটারি উৎপাদন ও রিসাইক্লিং কারখানার আশপাশের এলাকায় বসবাসকারীদের সুরক্ষায় বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়।দেশের শিশুদের জন্য এক সুস্থ, দূষণমুক্ত ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সীসা দূষণ রোধে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এ বিশেষ আলোচনা সভা শেষ হয়।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স